Sunday, 10 July 2016

আমার চোখে অমল দা


সালটা ছিল ২০০৩। আগের দুটো বছর সালগাওকারে ভালোই কেটেছে। ন্যাশনাল লিগএ দ্বিতীয় এবং চতুর্থ স্থান পেয়ে ক্লাব খুব খুশি। সঙ্গে আমার পারফর্মেন্সেও সন্তুষ্ট হয়ে ৩ বছরের জন্য কন্ট্রাক্ট অফার করল। কিন্তু অফিসে ছুটির জন্য রাজি না হওয়ায় আমার পক্ষে কলকাতার বাইরে খেলা সম্ভব হচ্ছিল না। কলকাতায় খেললে দুই প্রধান এর একটা তে খেলতে হবে।  কিন্তু সেখানেও আমার সমস্যা। পারিবারিক কারনে মোহনবাগান বা ইস্টবেঙ্গল দুই ক্লাবেই খেলা অসম্ভব ছিল। তাই "এভার- রেডি" ক্লাব (বর্তমানে ইউনাইটেড স্পোর্টস) এ জয়েন করলাম। উৎপল গাঙ্গুলী ক্লাব প্রেসিডেন্ট এবং অমল দত্ত কোচ। সেখান থেকেই অমল দত্তকে একদম কাছ থেকে দেখলাম কোচ হিসেবে।
এর আগে ১৯৯৭ ডায়মন্ড কোচ এর বিরুদ্ধে একাধিক ম্যাচ খেলেছি ইস্টবেঙ্গলের হয়ে। কিন্তু এই প্রথমবার তাঁকে কোচ হিসেবে দেখলাম ড্রেসিং রুমের মধ্যে।
আমাদের খুব কম বকতেন। ভীষণ স্বাধীনতা দিতেন এবং পরামর্শ দিতেন নির্ভয়ে খেলার। সেই বছর এভার-রেডি প্রথমবার কলকাতা লীগের সর্বোচ্চ  পর্যায়ে খেলছিল। গোল এ আমি, ডিফেন্সে দুলাল বিশ্বাস। মিডফিল্ডে জয়ন্ত সেন, ফরওয়ার্ড এ ইউজিন  গ্রে। এই মোট ৪ জন এক্সপিরিয়েন্স  ফুটবলার। বাকিরা সবাই জুনিয়র। টিম স্পিরিটকে অমল দা খুব গুরুত্ব দিতেন। এবং কেউই অপরিহার্য নয় এই কথা বারংবার বলতেন। প্রতি ম্যাচ অনুযায়ী ফুটবলার নামাতেন। যাকে বলে "Horses for Courses"। তাঁর স্ট্রাটেজিতেই সেই বছর এভার রেডি কলকাতা লীগের রানার্স হয়েছিল। এবং সব থেকে বড় কথা মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট ও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ২ ম্যাচে ১ পয়েন্ট পেয়েছিল।
যখন টিম নিয়ে আলোচনার সময় কখনও একা বসতাম ওনার সঙ্গে, বেশ  কয়েকবার তাঁর চোখে হতাশা দেখেছিলাম। যে আধুনিক ফুটবলটা তিনি শিখে এসেছিলেন বিদেশ থেকে সেই জ্ঞানের প্রয়োগ হয়ত আরও বেশি ভাবে করতে পারতেন। AIFF যতটা স্বাধীনতা এবং স্টেবল কন্ট্রাক্ট বিদেশি কোচদের দেয় তার অর্ধেকও যদি পেতেন অমল দত্ত, তাহলে ভারতীয় ফুটবল আরও উপকৃত হতে পারত।
"Loose talk" করার দোষে অনেকবার তাঁকে ভুগতে হয়েছে। লেট নাইনটিজের কোন এক সময় আমি দিপেন্দু বিশ্বাস আর সম্ভবত শঙ্করলাল কেরালায় ইন্ডিয়ান ক্যাম্প থেকে ফিরছি। বিজয়ওয়াড়া তে ট্রেন চেঞ্জ করার জন্য অপেক্ষা করছি। দেখলাম ওয়েটিং রুমে অমল দা সস্ত্রীক বসে আছেন। চার্চিল ব্রাদার্স থেকে তাঁকে অপসারিত করেছে। আবার নতুন চাকরি খোঁজার উদ্বিগ্নতা লক্ষ্য করছিলাম তাঁর শরীরী ভাষায়। জিজ্ঞাসা করেছিলাম "স্যার- কেন সবসময় অপ্রিয় সত্যি কথা বলেন। একটু মানিয়ে নিয়ে চললেই তো চাকরি টা যেত না?" উনি শুধু একটা হালকা হাসি হেসেছিলেন।
আমার মনে হয় অমল দত্ত সময়ের আগে জন্মে ছিলেন। আজ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বিদেশি ফুটবলের হাড়ির খবর আমরা জেনে যাই। আজ থেকে ১০ বছর আগেও কিন্তু এমন সুযোগ ছিল না।  

No comments:

Post a Comment